বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবার নারীদের কী চোখে দেখে

By : Update Study Group | : 23 April, 2021
বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবার নারীদের কী চোখে দেখে

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপির বিধায়ক পদপ্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একটি মিম টুইট করেছেন। মিমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে লেখা: ‘ম্যায় বঙ্গাল কি বেটি হুঁ’। সঙ্গে অমিত শাহের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে: ‘বেটি পরায়ে ধন হোতি হ্যায়, ইস বার বিদা কর দেঙ্গে’। মিমটি বাবুল সুপ্রিয় তৈরি করেছেন, না কি তিনি শুধু শেয়ার করেছেন – তাতে কিছু এসে যায় না। মিমের বিষয় ও ভাবনার মধ্য দিয়ে নারীদের সম্পর্কে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মনুস্মৃতির প্রতিফলন যাকে সঙ্ঘ পরিবার সংবিধানের স্থানে বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে – কন্যা হল ভূমি, পশু ও বস্তুর ন্যায়; তাই তাকে সম্প্রদান করতে হবে। বিবাহের সময় পিতৃগৃহ থেকে কন্যাকে বিদায় করে স্বামীর হাতে সম্প্রদান করার পর নারীকে কী চোখে দেখা হবে সে প্রসঙ্গে আমাদের আলোকিত করেছেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত: ‘‘একজন স্বামী ও স্ত্রী পরস্পর এক চুক্তিতে আবদ্ধ যেখানে স্বামী বলে তুমি আমার ঘরের যত্ন নেবে এবং আমি তোমার প্রয়োজনগুলির যত্ন নেব। আমি তোমাকে নিরাপদে রাখব।… তাই স্বামী চুক্তির শর্ত অনুসরণ করে চলে। যখন পর্যন্ত স্ত্রী চুক্তি অনুসরণ করে, স্বামী তার সঙ্গে থাকে, কিন্তু যদি স্ত্রী চুক্তি খেলাপ করে, স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়।’’ (০৬.০১.২০১৩, পিটিআই) অর্থাৎ মোহন ভাগবত মনুস্মৃতিকে অনুসরণ করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন – স্ত্রী যদি এই অমোঘ বার্তাকে লঙ্ঘন করে, তবে তাকে পরিত্যাগ করার অধিকার স্বামীর আছে।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সঙ্ঘ তথা আরএসএস-এ নারীদের প্রবেশাধিকার নেই, শুধু মাত্র পুরুষরাই তার সদস্য হওয়ার ‘যোগ্য’। সঙ্ঘের অন্যতম স্থপতি হেডগেওয়ার নারীদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলেন। ঐ সেবিকা সমিতিতে কবিতা, গান ও শ্লোকের ছন্দে সদস্যদের সামনে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের কর্তব্য তুলে ধরা হয়। সমিতি যাতে হিন্দু নারীদের হিন্দুত্ববাদী দর্শন ও প্রকল্পের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে, সেই লক্ষ্যে তাদের উপযুক্ত করে তোলা হয়। সেবিকাদের কর্তব্য হল – তারা নারীদের ‘পশ্চিমি’ প্রভাব থেকে দূরে রাখবে, তাদের সন্তানদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী ঐতিহ্যময় সংস্কার বা মূল্যবোধের সঞ্চার ঘটাবে। (০৩.১১.১৯৯৬, অর্গানাইজার) সঙ্ঘে নারীদের প্রবেশ কেন অসম্ভব সেই প্রসঙ্গে তৃতীয় সঙ্ঘপ্রধান বালাসাহেব দেওরস বলেন, ‘‘নারীদের যেখানে গৃহস্থালীর দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে কী করে তারা শাখায় অংশগ্রহণ করবে?’’ সেবিকা সমিতির এক বরিষ্ঠ সদস্য বলেছেন, ‘‘পরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে ঐ সময়ে শাখাতে আসা অনুচিত।’’ (১৭.১০.২০১৭, ইকনমিক টাইমস)

স্বামী যদি স্ত্রীকে মারধোর করে তাহলে স্ত্রীর কর্তব্য কী? সেবিকা সমিতির একজন সর্বক্ষণের কর্মী বলেন, ‘‘বাচ্চাদের খারাপ ব্যবহারের জন্য তাদের পিতামাতা কি ভর্ৎসনা করে না? একটি বাচ্চা যেভাবে তার পিতামাতার সঙ্গে মানিয়ে চলে, সে রকম একজন স্ত্রীকেও তার স্বামীর মানসিক অবস্থা বুঝে আচরণ করতে হবে এবং তাকে বিরক্ত করা এড়িয়ে চলতে হবে। একমাত্র এভাবেই পরিবার একসঙ্গে থাকতে পারে।’’ নারীদের জন্য এই চমৎকার নিদানই শুধু দেওয়া হয়নি, নারীদের কাছে বিবাহবিচ্ছেদকে চরম ত্যাজ্য করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের কর্তব্য হল পরিবারকে একত্র রাখা, তাকে ভাঙ্গা নয়। আমরা মেয়েদের মানিয়ে চলতে বলি।’’ (২১.০১.২০১৩, ফার্স্টপোস্ট) সঙ্ঘের নির্দেশ: স্বামীর হাতে অত্যাচারিত স্ত্রীকে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেওয়া যাবে না। বরং পরিবারকে একত্র রাখার জন্য স্ত্রীকে বিনয়ী, সহনশীল এবং স্বামীর একান্ত বাধ্য ও অনুগত থাকার কর্তব্য পালন করে যেতে হবে। মনুস্মৃতি অনুযায়ী পতি হল প্রভু – স্ত্রীর কর্তব্য হল সন্তান উৎপাদন, আত্মীয় পরিজনের সেবা এবং গৃহস্থালীর কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা। মনুস্মৃতি আরও বলেছে, পতি দুশ্চরিত্র, কামুক বা গুণহীন হলেও সাধ্বী স্ত্রী দেবতা জ্ঞানে তাকে সেবা করে যাবে। (‘মনুসংহিতা এবং নারী’, কঙ্কর সিংহ, রাডিক্যাল ইম্প্রেশন) সঙ্ঘ বা বিজেপির নেতানেত্রীরা আসলে উক্ত মনুস্মৃতির বিধানকেই নারীদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়।

আরএসএস-এর দ্বিতীয় সঙ্ঘপ্রধান গোলওয়ালকর প্রণীত ‘বানচ্ অব থটস’-এ যে হিন্দু রাষ্ট্রের ছবি আঁকা হয়েছে তাতে নারীরা হল বিশ্বস্ত মাতা যারা তার সন্তান-সন্ততিদের যত্নের সঙ্গে লালনপালন করে এবং ‘বিনষ্টকারী’ পশ্চিমি প্রভাব থেকে রক্ষা করে। গোলওয়ালকরের বক্তব্য হল: পুরাণের সাবিত্রীর মতো ‘নিষ্ঠা’, ‘পবিত্রতা’ যেন হিন্দু নারীর কাম্য হয়ে ওঠে। তিনি নারীকে ‘গোমাতা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘‘মাতার দুগ্ধ থেকে মুক্ত হওয়ার পর (মানুষ) গরুকে দেখে যে তাকে সারা জীবন দুগ্ধ পান করায়।’’ (২৮.১২.১৯৯১, ইপিডবল্যু) কখনও কখনও মাতার স্থান ‘গোমাতা’ অর্থাৎ গরুর থেকেও হীন। কারণ নারীর ব্যক্তিত্ব বিকাশের চাহিদা আছে, স্বাধীনতা দাবি করার সম্ভাবনা আছে, ‘বিপজ্জনক’ যৌন আকর্ষণ আছে যা বহু পুরুষকে ‘প্রলুব্ধ’ করে, নারীকে ‘অপবিত্র’ বা ‘অশুচি’ করে দেওয়া যায় – ‘গোমাতা’র ক্ষেত্রে এসব ঘটার সম্ভাবনা নেই। তাই নারীর ‘মর্যাদা’ ও ‘পবিত্রতা’ রক্ষার নামে তাকে গৃহে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখাই পুরুষদের অন্যতম কর্তব্য। সঙ্ঘের অন্যতম আদর্শ দয়ানন্দ সরস্বতী এমন এক ‘নিয়োগ’ প্রথা অবলম্বন করার কথা বলে গেছেন যেখানে নারীর যৌন কামনাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং বংশবৃদ্ধি করার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। (পূর্বোক্ত) সঙ্ঘ নারীদের কী চোখে দেখে তা এই দৃষ্টান্তগুলি থেকে বোঝা যায়।

বস্তুত, সঙ্ঘ পরিবার মনুস্মৃতির বিধানকেই অনুসরণ করে চলেছে। তাই নারীদের উপর জঘন্য যৌন নির্যাতন প্রসঙ্গে পুরুষপ্রভুত্বকারী সমাজের কোনও নিন্দা অথবা নারীকে উপভোগের সামগ্রী হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির কোনও সমালোচনা তাদের থেকে পাওয়া যায় না, বরং পাওয়া যায় প্রচ্ছন্ন সমর্থন। জম্মুর কাঠুয়ায় এক নাবালিকাকে আট দিন ধরে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করার দায়ে অপরাধীদের সমর্থনে সঙ্ঘ পরিবারের নেতা-মন্ত্রীরা মিছিল করে, উত্তপপ্রদেশের উন্নাওতে ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর সমর্থনে সঙ্ঘের মদতপুষ্ট মিছিল বেরোয়। হাথরাসে ধর্ষিতা নারীর মৃতদেহ সরকারি তত্ত্বাবধানে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ আশ্রমের সাধুবাবা ধর্ষণের দায়ে জেলে গেলেও তার সমর্থনে সঙ্ঘের নেতানেত্রীরা বিবৃতি দেয়। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ধর্ষিতা ও ধর্ষককে একসাথে বেঁধে হাঁটানো হয় – সঙ্গে ওঠে ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি! এইসব অন্যায় অত্যাচার চলে নির্বিচারে – বিজেপি সরকারের নাকের ডগায়।

নারীদের উপর যৌন নির্যাতন প্রসঙ্গে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘নারীদের উপর যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা শহুরে ঘটনা এবং নিন্দাজনক। এটা একটা বিপজ্জনক ঝোঁক। কিন্তু এই অপরাধ ভারত বা দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে ঘটে না। আপনি গ্রামে বা জঙ্গলে যান, সেখানে কোনও গণধর্ষণ বা যৌন অপরাধ ঘটে না।… এখানে ‘ভারত পরিণত হয় পশ্চিমি সংস্কৃতির প্রভাবাধীন ‘ইন্ডিয়া’তে…।’’ (০৬.০১.২০১৩, পিটিআই) অর্থাৎ ভাগবতের মতে ধর্ষণ হল পশ্চিমি ‘প্রভাব’, এ দেশে নারীকে উপভোগের সামগ্রী বা নিছক ‘বস্তু’ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর চোখে পড়ে না। প্রকৃতপক্ষে, কাঠুয়া, উন্নাও, হাথরাস কোনও মেট্রোপলিটন শহর নয়। ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে গ্রাম-শহরের যে কোনও ভেদাভেদ নেই, তা তাঁর চোখে পড়ে না।

মনুবাদের ভিত্তিতে পরিবারে নারীর স্থান কোথায় সে প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা যাক। মনুস্মৃতি বলছে – নারী বাল্যকালে পিতার, যৌবনে পতির ও পতি মৃত হলে পুত্রের অধীনে থাকবে; স্ত্রীলোক স্বাধীনভাবে থাকবে না। (কঙ্কর সিংহ) নারীর অধিকারের কোনও স্বীকৃতি তো নেই-ই, বরং মনুস্মৃতি নারীদের জন্য খুবই নিকৃষ্ট, হীন ও অমর্যাদাকর অবস্থান নির্দিষ্ট করে গেছে। মনুর বিধান, ‘‘স্ত্রীলোকদের (স্বামী) ব্যক্তিগণ তাদের দিনরাত পরাধীন রাখবে। নারীরা রূপ বিচার করে না। রূপবান বা কুরূপ পুরুষমাত্রেই তার সঙ্গে সম্ভোগ করে। নারীদের স্বভাবই হল পুরুষদের দূষিত করা। মা, বোন, মেয়ের সঙ্গে শূন্যগৃহে পুরুষ থাকবে না। (পূর্বোক্ত) এই মনুস্মৃতি হল সঙ্ঘের প্রস্তাবিত সংবিধান!

শুধু মনুস্মৃতি নয়, পৌরাণিক কাহিনীগুলোতেও নারীদের অবস্থান অত্যন্ত হীন ও অমর্যাদাকর। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে ভীষ্ম বলেছেন, ‘‘কামিনীগণ সৎকুলজাত, রূপসম্পন্ন ও সধবা হলেও স্বধর্ম পরিত্যাগ করে। তাদের চেয়ে পাপপরায়ণ আর কেউই নেই। তারা সকল দোষের আকর। তারা অবসর পেলেই ধনবান ও রূপবান পতিদের পরিত্যাগ করে পরপুরুষ সম্ভোগে প্রবৃত্ত হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘স্ত্রীগণের কোনও কার্য বা ধর্ম নির্দিষ্ট নেই। তারা বীর্যহীন, শাস্ত্রজ্ঞানশূন্য ও মিথ্যাবাদী…।’’ (পূর্বোক্ত)

পুরাণ ও শাস্ত্রে নারীদের সম্পর্কে এই ধরনের অবমাননাকর বাণী ছত্রে ছত্রে বিধৃত। তাই কেরালায় শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার পিছনে থাকে মনুবাদের ছায়া। শবরিমালা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে ২০১৮ সালে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট সমাজ কর্তৃক গৃহীত ঐতিহ্যের প্রকৃতি ও যুক্তিকে বিচার না করে রায় দিয়েছে।’’ (২৭.১০.২০১৮, কাউন্টারকারেন্টস)

সতীদাহ প্রথার মতো এক ভয়াবহ, জঘন্য প্রথার সমর্থক আধুনিক কালে কম নেই। গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি পর্বে রাজস্থানের রূপ কানোয়ারের সতী হওয়াকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে যেমন প্রতিবাদ উঠেছিল, ঠিক তেমনই তার পক্ষে দাঁড়িয়ে সঙ্ঘ পরিবারের নেতানেত্রীরা অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। বিজেপি নেত্রী বিজয়রাজে সিন্ধিয়া প্রকাশ্যে সতীপ্রথাকে সমর্থন করে বলেছিলেন, সতী প্রথা হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক ‘‘ঐতিহ্য’’ এবং হিন্দু নারী সতী হবে কি না তা বেছে নেওয়ার অধিকার তার আছে। উপরন্তু, তাঁর মতে যাঁরা সতীপ্রথার বিরোধিতা করছেন তাঁরা ‘‘বাজারি মহিলা’’; ‘‘যাঁদের হিন্দু ধর্মের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা নেই, যাঁরা পশ্চিমি মতাদর্শে বিশ্বাসী, যাঁরা ক্লাবে যায়, মাতাল হয়’’ তাঁরা কী করে ‘‘জানবেন পতিব্রত কাকে বলে?’’ (পূর্বোক্ত)

বস্তুত, পিতৃতান্ত্রিক ও পুরুষপ্রভুত্বকারী সমাজে নারীদের উপরে ঘরে ও বাইরে যে লাগাতার আক্রমণ, অপমান, নির্যাতন চলছে তার সমাধানের দিকনির্দেশ সঙ্ঘের হিন্দুত্ববাদী দর্শনে নেই। ভারতের সংবিধানে যেটুকু গণতন্ত্র আছে, নারীদের জন্য যেটুকু অধিকার স্বীকৃত, সঙ্ঘ পরিবার সেটাও তুলে দিতে চায়। মনুবাদই তাদের কাছে পরম আদর্শস্থানীয়। নারী স্বাধীনতা, নারী মুক্তি, পিতৃতান্ত্রিকতা ও পুরুষপ্রভুত্বের বিরুদ্ধে নারীর প্রতিবাদ ইত্যাদি তাদের কাছে পশ্চিমি ও বিদেশী চিন্তাধারা প্রসূত। ওসব এ দেশে চলে না। সুতরাং নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীদের সরব কণ্ঠস্বরের প্রতি তারা যে খড়্গহস্ত হবে তাতে আশ্চর্যের কী আছে!

তাই, বিজেপি কথিত ‘সোনার বাংলা’য় নারীদের জন্য কী ধরনের ভাগ্য অপেক্ষা করে আছে তা বোঝা কঠিন নয়। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রচারের অর্থ দাঁড়াচ্ছে – পুরুষের সম্ভোগ, হিন্দু সন্তান উৎপাদন ও গৃহস্থালীর কাজের জন্য ‘বেটি বাঁচাও’। আর সেই হিন্দু সন্তানদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী মূল্যবোধের সঞ্চার ঘটানোর কাজটা যাতে ‘মাতা’রা করতে পারে, তার জন্য ‘বেটি পড়াও’। বাকি কাজটা পালিত হবে মনুবাদী সংবিধানের প্রয়োগের মাধ্যমে – তার জন্য সঙ্ঘের দরকার দেশ জুড়ে ক্ষমতার বিস্তার। বাংলার নির্বাচন তারই একটা অঙ্গ।